অনলাইন ডেস্ক
গণ-অভ্যুত্থানের পর পাল্টে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বেশির ভাগ পদে ছাত্রলীগ জয়ী হলেও সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূর।
এই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই গত বছর দেশে ঘটে নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তন। ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের পতনের পেছনে যেসব তরুণ ছাত্রনেতারা ভূমিকা রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকে এখনো ঢাবির শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আছেন। ফলে এবার ডাকসু নির্বাচনে কারা লড়বেন, সেটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে।
নির্বাচনের সময়সূচি
মঙ্গলবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ আগস্ট। ভোট হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
এবার নেই বয়সসীমা
২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রার্থীর বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর। এবার সেই সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হলেই প্রার্থী হওয়া যাবে। তবে সান্ধ্যকালীন কোর্স, এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা ও ভাষা কোর্সের শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন না। একই নিয়ম প্রযোজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্ষেত্রেও।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যাঁদের ছাত্রত্ব নেই, তাঁরাও এবার নির্বাচন করতে পারবেন না।
হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র
ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ভোট কেন্দ্র হবে হলের বাইরেও। ছয়টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্জন হল, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব, সিনেট ভবন এবং উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
ছাত্রসংগঠনগুলোর পরিকল্পনা
এবার অধিকাংশ সংগঠন দলীয় প্যানেলের বদলে সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল গঠনের কথা ভাবছে। গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের অনেককেই প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নারী, সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
আলোচনায় থাকা প্রার্থীরা
এবার মোট ২৮টি পদে নির্বাচন হবে। নতুন যোগ হয়েছে ৪টি পদ: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক।
আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন:
- গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ: আবু বাকের মজুমদার, জাহিদ আহসান, তাহমিদ আল মুদ্দাসির, আবদুল কাদের
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: উমামা ফাতেমা
- ঢাবি সাংবাদিক সমিতি: মহিউদ্দিন মুজাহিদ
- ছাত্রদল: আবিদুল ইসলাম খান, বি এম কাওসার, তানভীর বারী হামিম
- ছাত্র ইউনিয়ন ও বাম সংগঠন: মেঘমল্লার বসু, জাবির আহমেদ
- ছাত্রশিবির: আবু সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ
- ছাত্র অধিকার পরিষদ: বিন ইয়ামিন মোল্লা
মতামত ও প্রতিক্রিয়া
ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল ঘোষণায় তড়িঘড়ি করেছে এবং ছাত্রলীগ বা বিতর্কিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়েই নির্বাচন ডেকেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে, ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিলোপের দাবি উপেক্ষা করে আগের গঠনতন্ত্রেই নির্বাচন হচ্ছে। তারা প্রতিবছর নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন চায় এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন যেন অংশ না নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ মনে করছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং প্রশাসন যেন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে।
ছাত্রশিবির বলেছে, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা চায় দেশের সব ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী মনে করছে, পেশিশক্তি ও অর্থের প্রভাব ঠেকাতে প্রশাসনকে ভূমিকা রাখতে হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।