অনলাইন ডেস্ক
জুলাই গণঅভ্যুত্থয়ের সময় আহতদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, আপনারাই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। সাহস, মানবতা ও দায়িত্ববোধের অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আপনারা। এই দুঃসময়ে যে সেবা দিয়েছেন, তা জাতি কোনোদিন ভুলবে না।”
আজ সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহতদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। (তথ্যসূত্র: বাসস)
বক্তব্যের শুরুতেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, “এটি পুরো জাতির জন্য গভীর বেদনার মুহূর্ত। নিহতদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”
তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনা আবারও আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে—চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশে যখন আতঙ্ক ও কান্না, তখন আপনারাই আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ক্লান্তি ভুলে যারা আহতদের সেবা দিয়েছেন, তাদের জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যুদ্ধের সময়ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ হয় না—এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থয়ের সময় আমরা এর ব্যতিক্রম দেখেছি। সেই সময়কার ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু গুলি চালায়নি, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও বাধা দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের সেই সময়ের ভূমিকা যুদ্ধক্ষেত্রের ডাক্তারদেরও ছাড়িয়ে গেছে। ছাত্রদের রক্তাক্ত করে মেডিকেলেও হামলা হয়েছে, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী চোখের আলো হারিয়েছে, কারণ তারা সময়মতো চিকিৎসা পায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা হয়েছে, এমনকি সিসিটিভি ফুটেজ ও রেজিস্টার খাতা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবু ডাক্তার-নার্সরা রোগীর তথ্য না লিখেই গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, “অনেক চিকিৎসক নিজেদের বাসায় বা গ্যারেজে অস্থায়ী ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। রক্ত ও ওষুধের সংকটেও নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে ব্যবস্থা করেছেন। রক্ত, অ্যান্টিবায়োটিক, পেইন কিলার নিজেরাই জোগাড় করেছেন।”
শেষে তিনি বলেন, “এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে আপনারা শুধু সেবা দেননি, মানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়ও লিখে গেছেন। জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”