অনলাইন ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৫ জুলাই (সোমবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হয়ে ওঠে। সেদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একাধিকবার হামলা চালায়। শুধু ঢাবিতেই আহত হন অন্তত ২৯৭ শিক্ষার্থী, যাদের অনেককেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও হামলায় আহত হয়েছেন চার শতাধিক শিক্ষার্থী।
অবস্থা এমন হয় যে, সন্ধ্যায় ঢামেক ও বার্ন ইনস্টিটিউটেও আহতদের চিকিৎসার সময় হামলা হয়। আন্দোলনকারীদের জন্য ক্যাম্পাস, আবাসিক হল এমনকি হাসপাতালও নিরাপদ ছিল না।
এর আগে ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলন নিয়ে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে রাজাকারদের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে?” এই বক্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাতেই হল থেকে মিছিল করে টিএসসিতে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়। স্লোগান ওঠে: “তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার”, “চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার”।
পরদিন ১৫ জুলাই, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “তাদের জবাব ছাত্রলীগই দেবে।” ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, “তাদের শেষ দেখে ছাড়ব।” এরপরই ঢাবি, সাত কলেজ, জবি, ঢামেকসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়।
বিকেলে বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথম হামলা হয়। পরে মধুর ক্যান্টিন, ভিসি চত্বর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেও হামলা চালানো হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, মহানগর ও সাত কলেজ ছাত্রলীগ এই হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতাল ও বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে আহতদের ওপর আবার হামলা চালানো হয়। রাতে হলগুলোতেও ছাত্রলীগ নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ঘেঁটে আন্দোলনের প্রমাণ পেলে মারধর করেন।
ইডেন কলেজে ছাত্রীরা আন্দোলনে অংশ নিতে চাইলে কলেজ ছাত্রলীগ গেটে তালা দেয়। কিন্তু তালা ভেঙে ছাত্রীরা বের হয়ে টিএসসিতে যায়।
পুরান ঢাকা থেকে জবির শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা পেরিয়ে টিএসসিতে আসে। এর আগে জবিতে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। আগের রাতে শাখা ছাত্রলীগ শতাধিক বহিরাগত নিয়ে সেখানে হামলা চালায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের স্লোগানকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে মন্তব্য করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীও আন্দোলনকারীদের রাজাকারের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে দুঃখ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।