“কোরবানির গরু কিনেছিলাম, ঈদের জন্য ঘরে ছিল আনন্দের প্রস্তুতি। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। এমন ছেলেহারা ঈদ যেন আর কারও জীবনে না আসে। আমাদের এতিম করে তুমি কোথায় চলে গেলে বাবা! এখন কীভাবে চলব, তোমার মা কীভাবে থাকবে?” — এমন করেই কাঁদছিলেন আবুল মনছুর, তাঁর ছেলে তুষারকে হারিয়ে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডীর বাংলাপাড়ার বাসিন্দা আবুল মনছুরের ছেলে মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তুষার (২৭) কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাতে। পরদিন শুক্রবার সকালে নিজ হাতে ছেলেকে দাফন করেন মনছুর।
তুষার পেশায় ছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। ছোট পরিবারে তিনি ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি একমাত্র ভাই। তাঁর দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
শুক্রবার দুপুরে তুষারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। আত্মীয়-প্রতিবেশীরা সমবেদনা জানাতে আসছেন। তুষারের বাবা আবুল মনছুর বারবার ছেলের কবরের দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন, আর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। মা রিজিয়া বেগম ছেলের জামা ও জুতা বুকের কাছে চেপে ধরে চোখের পানি ফেলছিলেন।
বড় বোন রুমা আক্তার জানান, “মাত্র পাঁচ দিন আগে জ্যাঠাতো বোন খালেদা মারা গেছে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাইকেও হারালাম। ভাই আর খালেদার কবর পাশাপাশি।”
আবুল মনছুর জানান, তিনি এক সময় দুবাইয়ে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে জমানো টাকা ও ঋণ নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা কেনেন। সেটি চালাত তুষার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নাশতা খেয়ে তুষার বের হয়। এরপরই দুর্ঘটনার খবর পান মনছুর।
খবর পেয়েই দুই মেয়েকে নিয়ে কালুরঘাট সেতুর দিকে দৌড়ান তিনি। সেতু, হাসপাতাল ঘুরে শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ছেলের মরদেহ পান। ভোরে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
মনছুর নিজেও অসুস্থ, ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। তুষারই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিবার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা-মা।
তুষারের ঘর এখন নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ। চারদিকে ছড়িয়ে আছে শুধুই স্মৃতি। বড় বোন রুমা বলেন, “ভাইয়ের স্মৃতিই এখন একমাত্র সম্বল।”