চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার মো. জমির উদ্দিন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করলেও এখনো কোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেননি। গত দেড় বছর ধরে নানা দপ্তরে ঘুরে ক্লান্ত তিনি, কিন্তু থেমে যাননি। এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
জমির উদ্দিন বলেন, “এনটিআরসিএ’র ভুলে আমরা ৭৩৯ জন ভুক্তভোগী ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমাদের অনেকেরই নম্বর বেশি থাকলেও কোনো গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারিনি। আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিলেও আমাদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অন্যরা চাকরি নিয়ে ঈদ উদযাপন করছে, আর আমরা বেকার অবস্থায় নিরবে কাঁদছি।”
নোয়াখালীর মো. ইউসুফ ইমন জানান, “নিবন্ধন সনদ পেয়েও এনটিআরসিএ’র কারণে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আত্মীয়-স্বজনদের সামনে মুখ দেখাতেও লজ্জা লাগে। করোনাকালে যেখানে চাকরিতে বয়সে ৩৯ মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ হয়নি। অথচ করোনায় আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে করোনার কারণে কার্যক্রম স্থগিত হয়। দীর্ঘ সময় পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, যেখানে ১ লাখ ৫১ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন।
২০২৩ সালের ৫ ও ৬ মে লিখিত পরীক্ষা এবং ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে মৌখিক পরীক্ষা হয়। এরপর ২৮ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার শুরু থেকে ফলাফল পর্যন্ত প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। এর ফলে অনেকের বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে এবং তারা গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারেননি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত এনেও তারা আবেদন করতে পারছেন না। এমনকি আদালতে তাদের বিষয়ে কোনো রিভিউ মামলাও নেই। এনটিআরসিএ নিজেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছে, ১৭তম ব্যাচের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো বাধা নেই।
এ বিষয়ে জানতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. মহিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান জানান, “১৭তম নিবন্ধনধারীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এনটিআরসিএ একটি সুপারিশও করেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগীরা আশাবাদী, প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে তারা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন।