ডেস্ক রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস এমন একটি দিন যেদিন ঘিরে রয়েছে শ্রমিক শ্রেণির দীর্ঘ আন্দোলন, আত্মত্যাগ আর অধিকারের ইতিহাস। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা শেষ হয় রক্তাক্ত এক অধ্যায়ে। হে মার্কেট স্কয়ারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা। তাঁদের রক্তের ঋণেই প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমঘণ্টার সীমা। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আজও পালিত হয় মহান মে দিবস।
এই দিন শুধু ইতিহাস স্মরণের নয়, বরং নতুন করে ভাবারও। চিন্তার খোরাক জোগায় এমন কিছু চলচ্চিত্র আছে। এই চলচ্চিত্রগুলো দেখলে স্পষ্ট হয় শ্রমিকদের গল্প শুধু কষ্টের নয়, বরং সংগ্রামের, সম্মানের। নিচে তিনটি চলচ্চিত্রের কথা তুলে ধরা হলো, যা ঘরে বসে দেখেও উপলব্ধি করা যায় শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গভীরতা।
মেইটওয়ান (Matewan)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি ছোট শহর মেইটওয়ানের কয়লাখনি শ্রমিকদের নিয়ে নির্মিত এই ছবির পটভূমি ১৯২০ সাল। শ্রমিকরা একজোট হয়ে ইউনিয়ন গঠন করে ধর্মঘট শুরু করেন। তাঁদের দাবি ছিল ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ। কিন্তু খনি মালিক এসব দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং ধর্মঘট ভাঙতে বাইরে থেকে শ্রমিক ভাড়া করেন।
এই সংকটময় সময়ে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক জো কেনেহ্যান ধর্মঘট ভাঙার জন্য আনা শ্রমিকদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, লড়াইটা ব্যক্তিগত নয় সবাই মিলে বাঁচার। পরিচালক জন সেইলেসের এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ক্রিস কুপার, জেমস আর্ল জোনস ও ম্যারি ম্যাকডোনাল।
নরমা রে (Norma Rae)
এই চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে একজন নারী শ্রমিকের গল্প, যিনি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। নাম নরমা রে। স্বল্প মজুরি আর অমানবিক কাজের পরিবেশে দিন কাটে তাঁর। একদিন শ্রমিকনেতা রুবেনের বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হন। পরিবার, প্রেমিক সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও নরমা রে নিজের অবস্থানে অটল থাকেন।
এই সিনেমাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। এখানে স্যালি ফিল্ড নরমার চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জেতেন। পরিচালক মার্টিন রিট ছবিটি মুক্তি দেন ১৯৭৯ সালে।
অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট (On the Waterfront)
শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে তৈরি ক্লাসিক এই চলচ্চিত্রে টেরি ম্যালয় নামের এক যুবকের বিবেকের জাগরণ উঠে আসে। তিনিএকজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতার অধীনে কাজ করলেও এক সময় প্রত্যক্ষ করেন একটি খুন। বিবেকের দংশনে তিনি ন্যায়বিচারের পথে হাঁটেন।
ইলিয়া কাজান পরিচালিত ছবিটির মূল আকর্ষণ মার্লোন ব্র্যান্ডোর অসাধারণ অভিনয়। ১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রে আরও ছিলেন কার্ল ম্যালডেন ও লি জে কব।
এই ছবিগুলো শিল্পমানে উচ্চমানের পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে। আমাদের মনে করিয়ে দেয় শ্রমের মর্যাদা, ন্যায্যতা আর অধিকার আদায়ের পথ কখনো সহজ ছিল না, এখনো নয়।