কিশোরগঞ্জের ইটনার সেই মানুষটি, যিনি জীবনের অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে গেছেন বিনা পারিশ্রমিকে, তিনিই মনু মিয়া—আর নেই। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন মনু মিয়া। ছয় দিন আগে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে আনা হয়েছিল। আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।
মনু মিয়ার জীবন ছিল নিঃস্বার্থ সেবায় ভরা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর টানা ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে নিজ হাতে খুঁড়েছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর। মৃত্যুসংবাদ পেলেই ঝড়বৃষ্টি বা রাতের আঁধার উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদালসহ সরঞ্জাম নিয়ে ছুটে যেতেন কবর খুঁড়তে। নিজের ধানিজমি বিক্রি করে একটা ঘোড়া কেনেন, যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারেন কবরস্থানে। সেই ঘোড়াটিই একসময় তাঁর সহযাত্রী হয়ে ওঠে।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একদিন দুর্বৃত্তরা তাঁর অনুপস্থিতিতে ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়লে দেশি-বিদেশি অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়াতে চান, ঘোড়াও উপহার দিতে চান। কিন্তু মনু মিয়া তা গ্রহণ করেননি। শুধু চেয়েছিলেন দোয়া—যাতে আবার সুস্থ হয়ে মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, শুধু ইটনাই নয়, পাশের মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জ, এমনকি রাজধানীর বনানী কবরস্থানেও মনু মিয়ার হাতে কবর খোঁড়ার ইতিহাস রয়েছে। শুধু কবর খুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, প্রতিটি কবরের মৃত্যুর তারিখ, নাম লিখে রাখতেন নিজের ডায়েরিতে।
আজ বিকেলে নিজ এলাকায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। যিনি জীবনের প্রতিটি দিন কাটিয়েছেন অন্যের শেষ আশ্রয় তৈরিতে, আজ তাকেও চিরশান্তির ঘরে শায়িত করা হবে—সম্মান আর শ্রদ্ধার সঙ্গে।