যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এক নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও বিনিময় কর্মসূচির (স্টুডেন্ট ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটর) ভিসার সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
একই সঙ্গে ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মকাণ্ড যাচাই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো শিক্ষার্থী বা এক্সচেঞ্জ ভিসার জন্য সাক্ষাৎকারের তারিখ নির্ধারণ করা যাবে না।
এ ছাড়া ভিসা প্রার্থীদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্ট, মন্তব্য ও শেয়ারও যাচাই করা হবে—যাকে বলা হচ্ছে “সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিনিং অ্যান্ড ভেটিং।” এই প্রক্রিয়া চালু না হওয়া পর্যন্ত নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম পলিটিকো ও ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, গত ২৭ মে রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বার্তায় এই নির্দেশনা জারি করেন। এতে বলা হয়, নতুন নীতির কারণে দূতাবাসগুলোর প্রশাসনিক কাজের চাপ বাড়বে এবং ভিসা প্রক্রিয়া আরও জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠবে।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক উত্তপ্ত। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্তভাবে বামপন্থী হয়ে পড়েছে, ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে।
সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, যেসব শিক্ষার্থীর ভিসা সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত তারিখ আগে থেকেই ঠিক করা আছে, তারা সেই সময় সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন। তবে যাদের এখনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত হয়নি, তাদের নাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।
সাধারণত, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দেশের মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার ভিসা পান। কিন্তু নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই পথ এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।
এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখানো বহু শিক্ষার্থীর জন্য ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণে বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।