অনলাইন ডেস্ক
দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন এখন ধীরে ও সতর্কভাবে সম্পর্ক জোরদারের পথে এগোচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর আলোচনা এবং উচ্চপর্যায়ের সফরের ধারাবাহিকতা এ বিষয়টির প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত নীতির প্রেক্ষাপটেও এই উন্নয়ন ঘটছে।
সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নয়াদিল্লি সফরে যাবেন। সেখানে তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে হিমালয় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর এটি হবে তাঁদের দ্বিতীয় বৈঠক।
চলতি মাসের শেষ দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন সফর করবেন। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সাত বছরে এটাই তাঁর প্রথম চীন সফর।
গত বছরের অক্টোবরে সীমান্ত টহল চুক্তির পর দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ অচলাবস্থার কারণে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আকাশপথে যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত-চীন সম্পর্কে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা ওয়াশিংটনের কৌশলগত অংশীদারদের জন্য অন্যতম সর্বোচ্চ হার।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এ সপ্তাহে নিজেদের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে, ফলে সম্ভাব্য উচ্চ শুল্ক এড়ানো গেছে।
ভারত ও চীন ইতিমধ্যে ২০২০ সাল থেকে স্থগিত থাকা সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্যও আবার চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে, যার মধ্যে হিমালয়ের তিনটি সীমান্তপথও অন্তর্ভুক্ত। যদিও সীমান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ দুই দেশের মোট বাণিজ্যের তুলনায় খুবই কম, তবুও একে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ‘নির্ধারিত সব বাণিজ্যপথের মাধ্যমে সীমান্ত বাণিজ্য চালুর বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, তারা সীমান্ত বাণিজ্য চালু করতে প্রস্তুত, যা সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দুই দেশের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরাসরি ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রেও তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করছে।
এদিকে ভারতের সরকারি চিন্তন প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে আরোপিত কঠোর নিয়ম কিছুটা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে। একে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে সম্ভাব্য ইতিবাচক পরিবর্তনের আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হচ্ছে।