জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা প্রস্তাব করেছে। এতে বলা হয়েছে, আইনসভার মাধ্যমে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে।
এ প্রস্তাব ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হলে সরাসরি প্রস্তাবটি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে এনসিপি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য গঠনে দ্বিতীয় দফা আলোচনা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠনের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে এবং একটি রূপরেখাও দিয়েছে। প্রথম দফার আলোচনায় বেশিরভাগ দল নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে মত দিলেও সেই সরকারের কাঠামো কেমন হবে, তা নিয়ে এখনো মতভেদ রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নতুন সরকার শপথ নেওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর থাকবে। এই সরকার প্রধান উপদেষ্টাসহ সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে গঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), যা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা থেকে গঠিত ৯ সদস্যের একটি কমিটি। এই কমিটির ন্যূনতম ৭ জন সদস্যের সম্মতিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবে। যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে আরও ৬টি বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা যাবে।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, এই সরকারের নাম হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার’ বা ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। সংসদ ভাঙার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। ভোটের অনুপাতে দলগুলোর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে এবং কোনো দলের কমিটিতে থাকতে হলে ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল মিলে তিনজন করে নির্দলীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে প্রধান উপদেষ্টার পদে। এসব নাম সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে, যেখান থেকে ৮-৩ ভোটের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা হবে। যদি কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে উচ্চকক্ষ ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতিতে নির্বাচন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য কিছু অযোগ্যতার বিষয়ও উল্লেখ করেছে এনসিপি। যেমন: যদি কেউ দুর্নীতি বা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হন, নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হন, কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে তিনি এই পদে অযোগ্য হবেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “নির্বাচিত হয়ে কেউ যেন অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, সে জন্য একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি প্রয়োজন। সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হলে সরকারপন্থী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ বন্ধ হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে।”