ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকটি উত্তেজনাপূর্ণ এক বিতর্কে রূপ নেয়। শুক্রবার (২০ জুন ২০২৫) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এই বৈঠকে দুই পক্ষ—ইসরায়েল ও ইরান—এক অপরকে যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করে।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ভিডিওবার্তায় বলেন, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
ইসরায়েলের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, যা তাদের জন্য হুমকি। এ কারণে আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে তারা ইরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো চলছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মুখোমুখি অবস্থান
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করছে ও বিভিন্ন দেশের ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না হলে কোনো আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।
জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইরান ‘ভুক্তভোগী সাজিয়ে নাটক করছে’। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আপনারা (ইরান) কিভাবে এমন একটি কর্মসূচির পরিণতি থেকে বাঁচার দাবি করেন, যার লক্ষ্য গণহত্যা?”
মন্তব্য দেন অন্যান্য সদস্যরাও
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ডরোথি শে বলেন, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের মূল উৎস এবং পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা তাদের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরায়েলের পাশে থাকবে।
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা সরাসরি কোনো পক্ষ না নিয়ে কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান।
রাশিয়ার প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন গুজব’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের সহযোগী হিসেবে পশ্চিমারা সমানভাবে দায়ী।
চীনের প্রতিনিধি ফু কং কিছুটা সতর্ক ভঙ্গিতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান করেন। তবে IAEA বা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু বলেননি।
পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আমরা শুধু সংকটের দিকে যাচ্ছি না, বরং দৌড়ে যাচ্ছি।”
IAEA-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে সংস্থাটি সরাসরি বলেনি যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে না, তবে চাইলে এক বছরের মধ্যে তা তৈরি করতে পারবে। এ বিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তাহলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভুল করছে।”
দুই দেশের প্রাণহানির হিসাব
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২২৪ জন নিহত এবং ২,৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের তথ্যমতে, ইরানের হামলায় তাদের ২৯ জন নিহত এবং প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছে। দুই পক্ষই জানিয়েছে, নিহত ও আহতদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।