অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত দিদারুল ইসলাম (৩৬) ছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর মাগুরার বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। স্থানীয়ভাবে দিদারুল ‘রতন’ নামেই পরিচিত ছিলেন।
উত্তর মাগুরা এলাকায় তাঁদের বাড়ির নাম ‘নাঈমা নীড়’। দোতলা এই বাড়ির চারটি ফ্ল্যাটের মধ্যে তিনটি ভাড়া দেওয়া, আর একটি ফ্ল্যাট ফাঁকা। বাড়িটি দেখাশোনা করেন দিদারুলের ফুফু তাহেরা বেগম (৪৭)। তিনি বলেন, “রতন এক ভাই ও দুই বোন। বছরখানেক আগে সে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা–বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। নিজে এক মাস ছিল, অন্যরা দুই মাস ছিল। খুব হাসিখুশি ছিল ছেলেটা। আজ সকালে ফোনে জানতে পারি, সে আর নেই। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।”
দুপুরে কুলাউড়ার বাড়ির ফাঁকা ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘরজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন আসবাবপত্র। একটি টেবিলে দিদারুল ও তাঁর পরিবারের কিছু ছবি রাখা রয়েছে। তাহেরার ছেলে, দিদারুলের ফুফাতো ভাই আবদুল কাইয়ুম জানান, তাঁদের মূল বাড়ি বড়লেখার ছিকামহল গ্রামে। ২০০০ সালের দিকে দিদারুলের বাবা আবদুর রব উত্তর মাগুরায় জমি কিনে বাড়ি বানান। ২০০৯ সালে পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। ওই বছরই দিদারুল কুলাউড়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দিদারুল আবার পড়াশোনা শুরু করে এবং তিন বছর আগে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (NYPD) কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়। সেখানেই বসবাসকারী মামাতো বোনকে বিয়ে করেন। তাঁদের আট ও ছয় বছর বয়সী দুই ছেলে রয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী বর্তমানে সন্তানসম্ভবা।
ঘটনার আগের দিন দিদারুল মাত্র দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে জরুরি ডিউটিতে ম্যানহাটানে যায়। গুলিবর্ষণের আগে সে ভিডিও কলে দুই বোনের সঙ্গে কথা বলে—সেই ছিল তাঁর শেষ কথা।
একই ভবনের নিচতলায় থাকেন কুলাউড়া সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষক আবু জাফর সাদেক, যিনি দিদারুলকে পড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “রতন খুব ভালো ছাত্র ছিল, শিক্ষকদের সম্মান করত। নিউইয়র্কে পুলিশে চাকরি পেয়ে আমরা সবাই খুশি হয়েছিলাম। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা কেউ কল্পনাও করেনি।”
জানা গেছে, সোমবার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের পার্ক অ্যাভিনিউ এলাকার একটি ভবনে দায়িত্ব পালনকালে ২৭ বছর বয়সী শেন ডেভন তামুরা নামের এক বন্দুকধারী ব্যক্তি ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সে বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে ছিল এবং তার কাছে একটি AR-15 রাইফেল ছিল। গুলিতে দিদারুলসহ চারজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং আরও দুজন আহত হন। পরে হামলাকারী নিজেই নিজের শরীরে গুলি করে আত্মহত্যা করে। আজ সকালে দিদারুলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ।
		