জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আনোয়ারা বেগমকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’–সংশ্লিষ্ট একটি মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। আজ রবিবার (১ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৬৯ বছর বয়সী একজন নারীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হতাশাজনক। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এইচআরএফবি জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রায়সাহেব বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার এক বিক্ষোভে গুলি চালানো হয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা চোখে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি পরে সূত্রাপুর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম জড়িত বলে তাঁরা আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দেন এবং পুলিশ একটি চলমান মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ২০২১ সালে অবসর নেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বয়স ও নারী হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় জামিনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না দেওয়া অনভিপ্রেত।
এইচআরএফবি জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি তারা সমর্থন করে। তবে কোনো অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত। অযাচিত গ্রেপ্তার কিংবা ব্যাপক হারে সন্দেহভাজন তালিকাভুক্তি বিচারপ্রক্রিয়াকে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
সংগঠনটি আরও সতর্ক করে দিয়ে জানায়, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে মামলাগুলো হয়রানিমূলক বলে প্রতীয়মান হতে পারে, যা প্রকৃত দোষীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই মামলার আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে আরও সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতা দেখানোর জন্য পুলিশ ও আদালতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম ১৯৫৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর কালিকাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রজীবনে পটুয়াখালী ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কর্মজীবনে তিনি শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি, নীল দলের আহ্বায়ক ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ স্বর্ণপদকসহ একাধিক সম্মাননা পেয়েছেন।
1 Comment
Nice share!