রাজপথে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ দাবিতে ১৪ থেকে ২২ মে পর্যন্ত টানা ৯ দিন দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় উপস্থিতি তাদের সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় দিয়েছে। এতে সরকারও চাপের মুখে পড়েছে।
এছাড়া উচ্চ আদালতের রায়ে ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে আর কোনো বাধা না থাকায় বিএনপি এটিকে তাদের একটি ‘জয়’ হিসেবে দেখছে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। এজন্য আসন্ন ঈদুল আজহার পর থেকে জুন মাসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। এর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অব্যাহতি দাবি করে।
বিএনপি জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলটির সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তারা মনে করে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি
বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চায়, তাহলে যেসব উপদেষ্টা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত বলে পরিচিত, তাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
ইতিপূর্বে কাকরাইলে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতেও একই দাবি জানান দলের নেতা ইশরাক হোসেন।
বিএনপি মনে করে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং রুটিন কার্যক্রম পরিচালনাকারী ছোট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা উচিত।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, তার বক্তব্য নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে, তাই তাকেও অব্যাহতি দিতে হবে।
সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে
বিএনপি বলছে, সরকার সময়মতো দায়িত্ব না নিয়ে চাপের মুখে কাজ করছে, যা সরকারের মর্যাদা ও সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করছে। একই সঙ্গে অন্যদের জন্যও চাপ দিয়ে দাবি আদায়ের উদাহরণ তৈরি করছে।
তারা বলছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ থাকা জরুরি। এর ব্যত্যয় ঘটলে বিএনপির সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।
ইশরাকের শপথ ও অবস্থান কর্মসূচি
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করাতে বিলম্ব করায় বিএনপি নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের দাবি, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাককে দ্রুত শপথ করাতে হবে।
১৫ মে থেকে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে নগর সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এই কর্মসূচি ৩১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায় ইশরাকের পক্ষে গেলে নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করে এবং বিকেলে ইশরাক অবস্থান কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
তবে তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, মাহফুজ আলম এবং খলিলুর রহমানের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। জনদুর্ভোগের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাও চান তিনি।