অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনেই জীবনঘনিষ্ঠ কবি ছিলেন। তাই তাঁদের লেখায় মানুষের কল্যাণ ও মানবতার বিকাশের কথা এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আলোচনার বিষয় ছিল—‘দৈশিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাঠ’।
উপদেষ্টা বলেন, “আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ-নজরুল আমাদের জীবনে ছিলেন। প্রতিটি মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-ভালোলাগা, সমস্যা বা সংগ্রাম থাকে। সাহিত্য, কবিতা ও সংগীত এসব কষ্ট হালকা করতে সাহায্য করে।”
তিনি আরও বলেন, “মধ্যযুগের একজন কবি বলেছিলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। নজরুলও বলেছেন, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নেহি কিছু মহীয়ান’। আর রবীন্দ্রনাথ আহ্বান জানিয়েছেন, ‘মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানকে’।”
সি আর আবরার বলেন, আজকের বৈশ্বিক ও দৈশিক বাস্তবতায় আমরা আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছি। একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা হারিয়ে ফেলেছি। ক্ষুদ্র স্বার্থে একে অপরকে নির্যাতন করছি। বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে যুদ্ধ ও হিংসা, যেখানে মানুষ লাঞ্ছিত হচ্ছে, মানবতা হুমকির মুখে পড়ছে। এই নৈরাজ্য ও অমানবিকতার বিরুদ্ধেই নজরুল বলেছিলেন—
“আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না।”
আর রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করেছিলেন— “মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ।”
আলোচনায় ড. আবরার আরও বলেন, দার্শনিক উইল ড্যুরান্ট তাঁর বিখ্যাত বই The Story of Civilisation–এ মানবজাতির ইতিহাস সম্পর্কে লিখেছিলেন:
“আমি যখন ইতিহাসের দিকে তাকাই, দেখি যেন এক রক্তবাহী নদী। মানুষ পরস্পরের প্রতি নিষ্ঠুরতায় যা রক্ত ঝরিয়েছে, সেটিই বইছে সেই নদীর স্রোতে। এটা দেখে আমি বেদনায় ভারাক্রান্ত হই। তবে যখন নদীর তীরে তাকাই, দেখি—মানুষ কবিতার ছন্দে, গানের সুরে, শিল্পকর্মে জীবনের জয়গান গাইছে।”
তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল এই কঠিন পৃথিবীতে জীবনের জয়গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই তাঁরা আমাদের জন্য আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁদের রচনার মানবিক আবেদন আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এজন্য তাঁদের পাঠ ও অধ্যয়ন আমাদের জন্য জরুরি।”
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. মোরশেদ শফিউল হাসান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, গবেষক কুদরত-এ-হুদা এবং সভাপতিত্ব করেন বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মো. ওমর ফারুক।